ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার ঈদের পোশাকে গলাকাটা দাম নিচ্ছে দোকানিরা। বিশেষ করে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে একদরের নামে গলাকাটা দাম রাখছে। দাম বেশি থাকায় পোশাক কিনতে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে দোকানগুলোতে এবার বেপরোয়া বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে।
মহানগরীর শপিং কমপ্লেক্স, জলিল সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, রেলওয়ে বিপণিবিতান, মশিউর রহমান মার্কেট, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, নান্নু সুপার মার্কেট, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, হাজী মালেক চেম্বার, নূর চেম্বার, এশা চেম্বার, আড়ং, অঞ্জন্স, ডাকবাংলো সুপার মার্কেট, মানিক মিয়া শপিং কমপ্লেক্স, বড় বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেটে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পোশাকেই বেশি জমজমাট দেখা গেছে। বিপণিবিতাগুলোতে বাহারি নাম আর ডিজাইনে মেয়েদের পোশাকই উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে ঈদ বাজারের।
দোকানিরা জানালেন, এবছর ঈদ বাজারে মেয়েদের ঘাগড়া, হুররম আর ভেল্কি এই তিনটি পোশাকের প্রতিই বেশি ঝোঁক সবার। এর মধ্যে হুররমই এবার বেশি সাড়া ফেলেছে। জনপ্রিয় তুর্কি টিভি সিরিয়াল সুলতান সুলেমানের বেগম হুররমের নামানুসারে নাম রাখা হয়েছে পোশাকটির। এছাড়া ইন্ডিয়ান টিস্যু কাপড়ের নানা আইটেমের পোশাকও নজর কাড়ছে এদেশের নারীদের। তবে শাড়িরও চাহিদা রয়েছে এক শ্রেণীর নারীদের কাছে। এছাড়া বরাবরের মতো ছেলেরা শার্ট-প্যান্টের পাশাপাশি কিনছেন পাঞ্জাবি। শিশুদের জন্য রয়েছে রং বাহারি নকশাদার পোশাক। মেয়ে শিশুদের জন্য রয়েছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, টপস, স্কার্ট, কুর্তা ও প্যান্ট। আর ছেলে শিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, কটি, শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট। তবে গরমে ঈদ পরায় এসব পোশাকের মধ্যে সুতি পোশাকের চাহিদা বেশি।
খুলনার শপিং কমপ্লেক্সে পোশাক কিনতে আসা সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকি বলেন, গত বছর যে পাঞ্জাবি কিনেছি ১৫ থেকে ১৬শ’ টাকায়। সেই পাঞ্জাবি এবার কিনতে হয়েছে ১৯শ’ টাকায়।
মহানগরীর সোনাডাঙ্গা ইয়েস পয়েন্ট থেকে একদামে প্যান্ট-শার্ট কিনে ফেরার পথে কথা হয় মিস্ত্রীপাড়ার শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, রোজার একমাস আগে যে শার্ট ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তা ১৪৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে
জিরো পয়েন্ট এলাকার বাবলী বেগম নামে এক গৃহিনী বলেন, সাধারণ একটি থ্রি-পিস যা আগে এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। ঈদ মার্কেটে তা হচ্ছে ২২শ’ টাকা।
টুটপাড়া এলাকার রিকশাচালক মুজিবর রহমান বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ে মাত্র ৬শ’ টাকার একটি থ্রি-পিস ঈদের বাজারে ১৮শ’ টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। ফলে আমাদের মতো গরিব মানুষ তো কিনতে পারছে না এমনকি মধ্যবিত্তদেরও পছন্দের জামা ক্রয় করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
শেখ আলী রেজা নামের এক ক্রেতা বলেন, আড়ং থেকে পাঁচ হাজার ৮৪৯ টাকা দামের একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। দাম মনে হচ্ছে বেশি নিয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো খুলনার পোশাকের বাজারে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার কারণে অভিযান চালনো উচিত।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য জেলাগুলোর দোকানে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে পোশাক বিক্রি করার অভিযোগে অভিজাত শপিংমলে অভিযান চালানো হলেও খুলনায় তা চোখে পড়ছে না। যে কারণে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের দাবি জানান তারা।
মশিউর রহমান মার্কেটের নিউ ভাই ভাই থ্রি-পিস কর্নারের প্রোপ্রাইটর মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এবার ঢাকা থেকে বেশি দাম দিয়ে থ্রি-পিস কিনতে হয়েছে। বিশেষ করে হাতের কাজ করা থ্রি-পিসের বেশ দাম দিতে হয়েছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে সারা বছর যেমন তেমন হলেও উৎসব আয়োজনে শাড়ি পরার আগ্রহ থাকে কমবেশি সবার। ঈদ বাজার ঘুরে জানা যায়, বিদেশি শাড়ির তুলনায় দেশি শাড়ির চাহিদা সব থেকে বেশি। অধিকাংশ শাড়ির নকশা অনেকটা মিক্স এন্ড ম্যাচ বলা যায়। ব্লক, এমব্রয়ডারি, কাঁথা, এসিড পেইন্ট সব ধরনের নকশার মিশেল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রিকসে কটনের পাশাপাশি সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, র-সিল্ক, কাতান, সিল্ক কাতান, টিস্যু, জর্জেটের শাড়ি এসেছে।
এছাড়াও বাহারি নকশার জামদানিও রয়েছে। বেনারসির কিছু নতুন কালেকশন এসেছে। রঙের ক্ষেত্রে হালকা রংকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। কেননা ন্যুড কালার চলছে এবারের ট্রেন্ডে। তবে এসব শাড়িতে রং এবং নকশা মিলেই থাকবে ফেস্টিভ লুক। ঈদে রঙ বাংলাদেশ থিমনির্ভর কালেকশন তৈরি করেছে। আর এই থিম নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শাড়ির পুরো জমিন জুড়ে। এসব শাড়ির রকম ভেদে আবার দামের পার্থক্য রয়েছে বেশ। দেড় হাজার থেকে শুরু করে ১৫-২০ হাজার টাকা দামেরও শাড়ি রয়েছে এসব ফ্যাশন হাউজগুলোতে। ক্রেতারা দাম এবং মান ভেদে এসব শাড়ি কিনছেন।
অঞ্জন’স-এর কর্ণধার শাহীন আহমেদ জানান, এবারের ঈদে শাড়িতে দুটো থিম নিয়ে কাজ করেছেন। ফ্লোরাল এবং জ্যামিতিক এই দুটো মোটিভে বিভিন্ন ফেব্রিকস নিয়ে শাড়ির বেশ কিছু কালেকশন এসেছে। তীব্র গরমের কারণে ক্রেতাদের স্বস্তির কথা মাথায় রেখে কটন ফেব্রিকসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া এন্ডি কটন, হাফ সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জামদানি ও কাতানের বেশ কিছু নতুন কালেকশন এসেছে। রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় এবং হালকা দুই ধরনের রঙ নিয়ে কাজ হয়েছে। ঈদ একটা কালারফুল ইভেন্ট তাই শাড়িতে রঙের বাহার থাকবেই। এছাড়া ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি এবং এপ্লিকের কারুকাজ এসেছে সুতি শাড়িতে।
মার্কেটে শাড়ি কিনতে আসা রোমানা আক্তার জানান, শাড়ির রঙ হিসেবে হালকা ও উজ্জ্বল রঙের শাড়িই তাদের প্রথম পছন্দ। তবে ভারি কাজ করা শাড়িও খুঁজছেন তারা। অনেক ক্রেতাই আবার জমকালো নকশা, ভারি এমব্রয়ডারির কাজ ও চুমকি, পুঁতি, স্টোনের কারুকাজ থাকা শাড়ি পছন্দ করছেন।